ফল যেন জানাই, প্রস্তুতি দেশে ও বিদেশে

    এখনও ঘোষণা হতে বাকি চব্বিশ ঘণ্টা। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই, যেন সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে লোকসভার ফলাফল!
    এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি! বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে লোকসভার সচিবালয়, এসপিজি-র সদর দফতর থেকে আম জনতা ছবিটা একই। ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের গণনায় কে জিতবেন, তার জন্য কোনও রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা নেই কোথাও। ছবিটা হল, যেন জিতেই গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী! পাশাপাশি অবশ্য এই প্রশ্নও উঠছে, যে যদি ফল উল্টে যায়, তবে তা হবে নির্বাচনী চিত্রনাট্যের এক চরম অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স!

    বিজেপি-র পক্ষ থেকে আড়াই হাজার কেজির লাড্ডুর অগ্রিম অর্ডার তো দেওয়া হয়েছেই, নরেন্দ্র মোদীর মুখোশ লাগানো ব্যক্তির ঠোঁটে ‘জয়ের’ মিষ্টি ঠুঁসে দেওয়া হচ্ছে!
    কিন্তু সে তো বিজেপি-র ঘরোয়া উৎসবের প্রস্তুতি। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী ধরে নিয়ে আগাম প্রস্তুতির কাজ চলছে সরকারি তরফেও। গুজরাতের বানসকাঁথা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ইতিমধ্যেই পৌছে গিয়েছে অল্পসংখ্যক এসপিজি-র একটি প্রতিনিধি দল। এই গ্রামেই গত তিরিশ বছর ধরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রী যশোদাবেন। আগামী কাল থেকেই তাঁর বিশেষ নিরাপত্তাবলয় যাতে কার্যকর হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই আগাম প্রতিনিধিদলের হাজিরা। এসপিজি-র পক্ষ থেকে এমনও বলা হচ্ছে যে, যত দ্রুত সম্ভব ঠাঁই বদল করতে হবে যশোদাবেনকে। কেননা, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী’ এই গণ্ডগ্রামে থাকলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে না। তাঁকে আসতে হবে আমদাবাদে, কিংবা নিদেনপক্ষে জেলার সদর দফতরে।
    দেশের অভ্যন্তরীণ মহলই নয়। গোটা বিশ্বই মোদী-আবাহনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দিল্লি নয়, আপাতত গুজরাত সরকারের সচিবালয়ই হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মূল স্নায়ুকেন্দ্র। জাপান থেকে ইজরায়েল, আমেরিকা থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছেন, আগামী কাল ক’টার সময় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। যে যার নিজের মতো হিসেবও কষা শুরু করে দিয়েছেন, ভারতে মোদীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা যখন হবে, তখন নিজের-নিজের দেশে ঘড়ির কাঁটায় ক’টা বাজবে। কেননা, অনেক রাষ্ট্রনেতাই চাইছেন মোদীর কাছে সবার আগে অভিনন্দনবার্তা পৌঁছে দিতে। মোদীর সঙ্গে যে রাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন বহুচর্চিত, সেই আমেরিকাই দু’দিন আগে আগাম বিবৃতি দিয়ে কার্যত মোদী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বসে রয়েছে। বারাক ওবামার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে যে, নতুন সরকার এলে ভারতের সঙ্গে কার্যকরী সম্পর্কের কোনও অবনতি হবে না।
    গুজরাতের সরকারি সচিবালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে লোকসভার সচিবালয় থেকেও। সেখান থেকে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে, ফল ঘোষণার পর শপথ গ্রহণ-সহ গোটা প্রক্রিয়ার খসড়া নির্ঘণ্ট। উদ্দেশ্য, যাতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই মোদী।
    প্রশ্ন হল, এই আগাম ফলাফল নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়ার একটি অন্যতম ভিত কিন্তু দেশের নানা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম এবং সমীক্ষক সংস্থাগুলির নির্বাচনী ও বুথ-ফেরত সমীক্ষা তথা পূর্বাভাস। সবাই এখন একবাক্যে বলছে, সরকার গড়ার প্রশ্নে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর ধারে কাছে নেই কংগ্রেস বা আঞ্চলিক কোনও দল। কিন্তু পাশাপাশি রাজনৈতিক শিবিরে এই গুঞ্জনও চলছে যে, গত দু’টি লোকসভা ভোটের একটিতেও এই ধরনের সমীক্ষা কিন্তু মেলেনি। ২০০৪ এবং ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের বুথ-ফেরত সমীক্ষায় কংগ্রেসের আসনপ্রাপ্তির সম্ভাবনা একেবারেই ধরতে পারা যায়নি। ২০০৪ সালে দেখানো হয়েছিল বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ পাবে আড়াইশোটির বেশি আসন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসেছিল মাত্র ১৮৯টি আসন। ‘ভারত উদয়’ স্লোগানটি সে বারও ফিরেছিল লোকের মুখে মুখে। তবে এর পাল্টা যুক্তি হল, ২০০৪-এ এবং হয়তো ২০০৯ সালেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এতটা প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া ছিল না। কংগ্রেসকে লড়তে হয়নি দুর্নীতির প্রবলতম অভিযোগের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি মোদী এ বার গোটা দেশে যে হাওয়া ছড়িয়ে দিয়েছেন, তেমন কোনও ঢেউও আছড়ে পড়তে দেখা যায়নি গত লোকসভা নির্বাচনে।
    আর এই সব কারণে সমীক্ষার ফলকে ভোটের ফল হিসেবে ধরে নেওয়ার মতো এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ইভিএমে বন্দি রায় প্রকাশ্যে আসার আগেই!

    0 comments:

    Post a Comment

    Read more at WWW.BANGLARMUKHONLINE.TK

    A forenight newspaper. Powered by Blogger.

    Latest Tweets