পাঁচ দিন পরে অবশেষে পারদ নামল কলকাতায়। কিন্তু অস্বস্তি কাটল কই!
এত দিন জ্বালা ধরানো শুকনো গরমের কবলে পড়ে নাজেহাল হয়েছে কলকাতা। এ বার দাপট দেখাতে শুরু করছে আর্দ্রতা। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরে একটি উচ্চচাপ বলয় তৈরি হচ্ছে। তার ফলে কলকাতা ও লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। বাড়ছে আর্দ্রতা। তার জেরেই অস্বস্তি বাড়ছে মহানগরে। আগামী দিনে এই অস্বস্তি বাড়বে বলেও হাওয়া অফিসের ইঙ্গিত।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি বেশি। গরমকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বা তার বেশি থাকলে, তাপপ্রবাহ বলা হয়। গত মঙ্গলবার থেকেই তাপপ্রবাহ চলছিল মহানগরে। এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি না থাকায় তাপপ্রবাহ বলা যায়নি।
তা বলে কি মানুষের কষ্ট কমেছে? মোটেই না। বরং দিনেদুপুরে রাস্তায় বেরোনো লোকজনের গায়ে রীতিমতো জ্বালা ধরেছে। সঙ্গে দরদর করে ঘাম। আবহবিদেরা বলছেন, আর্দ্রতা বাড়ার ফলেই অস্বস্তি বেড়েছে। গরমকালে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার একটি গড় হিসেব করে অস্বস্তি-সূচক নির্ধারণ করে হাওয়া অফিস। আবহবিজ্ঞানের তত্ত্বকথায়, গরমকালে অসহ্য পরিস্থিতির জন্য শুধু তাপমাত্রা দায়ী নয়, আর্দ্রতা কিংবা হাওয়া চলাচলের উপরেও তা নির্ভর করে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে অস্বস্তি-সূচক ছিল ৬৮। অর্থাৎ তীব্র অস্বস্তির পরিস্থিতি। যার প্রমাণ মিলেছে পথেঘাটেও।
ভরদুপুরে বনগাঁ শাখার ট্রেনে ঠান্ডা জলের সঙ্গে গ্লুকোজ মিশিয়ে বিক্রি করছিলেন এক ব্যক্তি। গ্লাসপ্রতি ৫ টাকা দরে হাতে-হাতে বিকোচ্ছিল সেই গ্লুকোজের জল। সকালবেলাতেই অফিসের কাজে রাস্তায় বেরোতে হয়েছিল মৃদুল চক্রবর্তীকে। বেলা বারোটা নাগাদ বাবুঘাটের কাছে হঠাৎই মাথা ঘুরে রাস্তায় বসে পড়েন তিনি। সঙ্গে থাকা সহকর্মীর সেবায় মিনিট পনেরো পরে ধাতস্থ হন ওই যুবক।
এ দিন সকালে সল্টলেকের এক বাসিন্দা বাড়ির কাছেই একটি কাফেতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে এক পরিচিতকে ফোনে বললেন, “অসহ্য গরম। মনে হচ্ছে, রোদে চামড়া পুড়িয়ে দেবে।”
এ দিন বিকেলে হঠাৎই মেঘলা হয়ে আসে মহানগরের আকাশ। তা দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, এই বুঝি বা ঝড়বৃষ্টি নামল! কিন্তু তাঁদের হতাশই হতে হয়েছে। গরম কমানোর দাওয়াই মেলেনি প্রকৃতির কাছ থেকে।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উচ্চচাপ বলয় থেকে জলীয় বাষ্প ঢোকার ফলেই স্থানীয় ভাবে মেঘ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তা থেকে কলকাতায় বৃষ্টি হবে, এমন আশ্বাস নিশ্চিত ভাবে দিচ্ছেন না তাঁরা। বরং জলীয় বাষ্প বাড়লে আরও অস্বস্তি বাড়ারই ইঙ্গিত মিলছে। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, জলীয় বাষ্প ঢোকার ফলেই এ দিন পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল। রেডার চিত্রে তার উপরে নজরও রাখছিলেন আবহবিজ্ঞানীরা।
তা হলে কি এই গরম পিছু ছাড়বে না? আপাতত তেমন কথা কিন্তু বলছে না আবহাওয়া দফতর। বরং তাপমাত্রা আর না কমারই ইঙ্গিত দিচ্ছে তারা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “আগামী দিন দুয়েকের জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতাই জারি রাখা হচ্ছে।”
0 comments:
Post a Comment
Read more at WWW.BANGLARMUKHONLINE.TK